আমার কন্যাকুমারী বিবেকানন্দ শিলা দর্শন
- নিবেদিতা লাহিড়ী
কোয়্যার সদস্য
Monday, May 16, 2025
মহারাজ সুমনাসানন্দজী VVCC তে এসেছিলেন গত বছর অগাস্ট(August 2024) মাসে। ওনার কার্যক্রম অনুযায়ী আমি আর দেবাশীষ গিয়েছিলাম USA-Canada Border এ Thousand Island Vivekananda Cottage (Ramakrishna-Vivekananda Center of NY) এ ওনাকে পৌছে দিতে। পথেই নানা গল্প, কথায় কথায় জানতে চাই যে কন্যাকুমারী তে কোন রামকৃষ্ণ মিশন আছে কিনা আর আমি সেখানে যেতে পারি কিনা। মহারাজজী তৎক্ষণাৎ জানালেন, "কোন অসুবিধা নেই, চেন্নাই রামকৃষ্ণ মিশনের Resident মহারাজ স্বামী পদ্মস্থানন্দজী কে আমি ভাল চিনি, উনি তোমাকে guide করবেন,আমি বলে রাখব তোমার কথা।"
আমার কন্যাকুমারী যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হল তখন থেকেই। যথাসময়ে গিয়ে পৌছালাম চেন্নাই রামকৃষ্ণ মিশনে। পূজনীয় মহারাজ স্বামী পদ্মস্থানন্দজী ও সব বুঝিয়ে দিলেন,পরের দিন চেন্নাই Egmore Station থেকে রওনা হলাম স্বামীজি র স্মৃতি ধন্য কন্যাকুমারীর দিকে।
"অজানা সমুদ্রতীর ,অজানা সে দেশ"
কন্যাকুমারী Railway Station থেকে 'বিবেকানন্দপুরম' এক কিলোমিটারের মধ্যেই, এখানে থাকার জায়গা ছাড়া ও আছে Sunrise point, Peacock Sanctuary, সারাদিনের জন্য vegetarian restaurant । আগে থেকে reservation করিয়ে রাখায় এখানেই এলাম আর Sunrise point থেকে বিবেকানন্দ শিলা দর্শন করলাম দূর থেকেই ।
এবার বিবেকানন্দ শিলা তে যেতে হবে। breakfast খেয়ে তৈরি হয়ে আসার পর বিবেকানন্দপুরমের reception এ এক "অটো দাদার" সাথে আলাপ হল। কলকাতা থেকে একা এসেছি শুনে উনি সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন নিয়ে যেতে। সেইমতো যাত্রা করলাম শ্রীমাকে প্রনাম করে। পূজনীয় মহারাজ চেন্নাই থেকে বার বার কুশল প্রশ্ন করছেন,এত দূরে এসে ও মনে হচ্ছে আমি বুঝি ওনার সান্নিধ্যে ই আছি। অটো দাদা ফেরীর কাছে নামিয়ে দিলেন আর বললেন দুঘন্টা পর এসে আবার আমাকে বিবেকানন্দপুরমে নিয়ে যাবেন।
আমরা সবাই ফেরী তে ওঠার পর যাত্রা শুরু হল। মাত্র সাত মিনিটের যাত্রা, কিন্তু কী উত্তাল সমুদ্র!! বিবেকIনন্দ শিলা র সামনে আর একটি শিলায় তামিল দার্শনিক কবি 'থীরুভাল্লুভার'র বিশাল মূর্তি। দুই শিলার মধ্যে একটি কাঁচের সেতু লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে দেখলাম।
বিবেকানন্দ শিলা তিন সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত,দেবী কুমারী র চরন ধন্য, স্বামীজীর ধ্যানমন্দির।এই শিলাই হল ভারতবর্ষের দক্ষিণতম বিন্দু। ১৯৭১ সালে একনাথ রানাডে জী এই memorial hall র কাজ শেষ করেন। এখানে আছে স্বামীজীর বিশাল মূর্তি, ধ্যান ঘর আর আছে তিন সমুদ্রের ঢেউয়ের অবিরাম স্বামীজী বন্দনা।
"মূর্ত মহেশ্বরমুজ্জল ভাস্করমিষ্টমমর-নরবন্দ্যম্"
কথিত আছে, দেবী পার্বতী এই শিলায় তপস্যা করেছিলেন বলে তাঁর পদ চিহ্ন আছে।এই শিলা র অপর এক নাম ,'Sripada পেরাই'। তামিল ভাষায় পেরাই মানে শিলা।
১৮৯২ সালে এই উত্তাল সমুদ্র সাঁতার দিয়ে এসে স্বামীজী এখানে ধ্যান করেছিলেন পরাধীন দেশে ভারতমাতার। দেখেছিলেন ভারতমাতার ষড়ৈশ্চর্যময়ী রূপ। তাঁর স্বপ্নের ভারত, ধ্যানের ভারতের সূচনা এখানেই।
নির্দিষ্ট সময়ে আমরা ফেরী ধরে ফিরে এলাম। বিকেলের পর ফেরী বন্ধ হয়ে যায়। অটো দাদা তিন সমুদ্রের সঙ্গম স্থলে নিয়ে গেলেন বিকেলে। তখন দূর থেকে দেখছিলাম আলোকিত কিন্তু নির্জন বিবেকানন্দ শিলা।মনে হল সারাদিন এত জনসমাগমের পর কি স্বামীজী এখন একা? আরে না না, "তাঁহারে আরতি করে চন্দ্র তপন "।
অটো দাদা কাছাকাছি আরো অনেক মন্দিরে নিয়ে গেলেন। পরদিন সকালে দেবী "কুমারী" মায়ের পূজো দিলাম। কন্যাকুমারী একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম এক পীঠ।
সেইদিন ই সন্ধ্যা বেলায় ফিরতি ট্রেনে রওনা দিলাম চেন্নাই।মনের মধ্যে অমলিন থেকে যাবে অসীম জলরাশির মধ্যে স্বামীজীর ধ্যানমন্দির বিবেকানন্দ শিলা।
আমার অন্তরের প্রনাম জানাই মহারাজ সুমনাসানন্দজী আর মহারাজ পদ্মস্থানন্দজী কে। ওঁরা সাহায্য করেছেন বলেই আমি যেতে পেরেছি।